Ticker

5/recent/ticker-posts

Ad Code

সিজদাহ দীর্ঘ করবেন কেন?


নামাজ বা সালাতের সবচেয়ে মধুর অংশ সিজদাহ। এ সময় মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে কাছে থাকে। আল্লাহকে ডাকার, আল্লাহর কাছে মনের আবদারগুলো তুলে ধরার, না-পাওয়া চাওয়াগুলো, মনের গভীরের ব্যথাগুলো ব্যক্ত করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এটা। আল্লাহর রাসূল (তাঁর উপর বর্ষিত হোক আল্লাহর শান্তি ও অনুগ্রহ), তিনি বলেছেন জুতোর ফিতে চাইলেও যেন আল্লাহর কাছে চাই।

সিজদার এই মাহাত্ম কেউ যখন বোঝে, তখন সিজদাহ হয় পরম আরাধ্য। দীর্ঘ হয় সিজদাহ। নত মাথায় একের পর এক তুলে ধরতে থাকে বুকের জমানো ব্যথাগুলো। একান্ত মিনতিগুলো। দুনিয়া ও আখিরাতের সব চাওয়াগুলো।

এ এক অদ্ভুত কথোপকথন। স্রষ্টা আর সৃষ্টির মাঝে কোনো ব্যবধান নেই। কোনো মাধ্যম নেই। সৃষ্টি তার স্রষ্টার সঙ্গে কথা বলছে সরাসরি। স্রষ্টা সেগুলো শুনছেন। প্রস্তুত করছেন প্রতিদান।

সব প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে সিজদার মতো একটি অনুগ্রহ দান করেছেন। অন্তরের বাসনাগুলো চাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদাহ করার সময় তিনি কপাল ও নাক জমিনে ভালভাবে লাগাতেন। উভয় হাতের বাহুদ্বয়কে পার্শ্বদেশ হতে এমনভাবে আলাদা করে রাখতেন যে, তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখা যেত।


হজরত ইবনে আব্বার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সিজদার মাঝে বলতেন-


اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি। (মুসলিম, মিশকাত)


অর্থ : হে আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে হেদায়েত দান করুন, আমাকে শান্তি দান করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন।

 

আল্লাহ পাকের মেহেরবানি যে তিনি আমাদের দৈনিক তার দরবারে সিজদা করার তাওফীক দিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না হলে আমাদের দ্বারা কোনো ভালো কাজই করা সম্ভব নয়। তাই সর্বদা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের প্রত্যাশী থাকা জরুরি। নিজের আমলের ওপর কোনোভাবেই ভরসা করা যাবে না।


চাকুরি পাচ্ছেন না? সিজদায় পড়ে আল্লাহকে জানান। চাকুরি পেয়েছেন, সিজদায় যেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। সংসারে সমস্যা? আল্লাহকে বলুন। সন্তান ইসলামের উপর নেই? আল্লাহর সামনে নত হয়ে দু‘আ করুন। নিজে ইসলামে এসেছেন, কিন্তু পরিবারের প্রিয়জনদের ইসলামের পথে আনতে পারছেন না? ফেসবুকে কোনো দীনি ভাই/বোনকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসেন। কিন্তু তার কোনো কর্মকাণ্ড পছন্দ হচ্ছে না? সহজ সমাধান — সিজদায় লুটিয়ে পড়ুন।

কী দরকার? শুধু আল্লাহকে বলুন। যা চাচ্ছেন, তা না দিলেও, বা তৎক্ষণাৎ না-পেলেও, আল্লাহ নিজের জ্ঞানে আপনার জন্য যেটা যখন ভালো মনে করেন, সেটা তখনই দেবেন — এই বিশ্বাস রাখুন। আমাদের জন্য আল্লাহর দুয়ার সবসময় খোলা। আমরা সেই দুয়ারে কড়া নাড়ছি তো?


পৃথিবীর সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য সিজদা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে এবং তাদের ছায়াসমূহও (সিজদা করে) সকালে ও সন্ধ্যায়—ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায়।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১৫)


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সিজদারত থাকে। অতএব তোমরা তখন অধিক দোয়া করতে থাকো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮২)


“সিজদাহ করে আল্লাহর কাছাকাছি হও।” [সূরাহ আল-‘আলাক়, ৯৬:১৯]

“তোমাদের প্রতিটা প্রয়োজনের জন্য আল্লাহর কাছে চাও। সেটা যদি লবণ হয়, এমনকি জুতোর ফিতে যদি ছিঁড়ে যায় তবুও।” [জামি‘ আত-তিরমিযি, হাদীস নং ৩৬০৪, হাসান]


সিজদা হ'ল আল্লাহর প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ। আল্লাহ মানব জাতির জন্য ছালাতের মত একটি ইবাদতের বিধান দান করেছেন। অতঃপর সারা বিশ্বের মানুষের সিজদার দিক নির্দেশনা বা প্রতীক হিসাবে বায়তুল্লাহ বা কা'বা শরীফ নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে রহমত করুণ এবং যাদের সিজদায় তিনি নিতান্তই খুশি হন এবং কবুল করেন তাঁর সেই সব বান্দাদের উসিলায় আমাদেরকেও সেই পথে পরিচালিত করুণ।


Post a Comment

0 Comments