একজন লোক কাপড়ের ব্যাবসা করি। এক মহাজন আনেক টাকা পাবে। এই অবস্থায় ঋণগ্রস্থ হয়ে মারা গেলে তার কী পরিণতি হবে যদি সে টাকার খবর কেউ জানে না এবং ঋণ পরিশোধ না করা হয়? কোরান ও হাদিস কী বলে জানালে উপকৃত হতাম ???
মানব জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে অন্যের নিকট ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। তাই ঋণ গ্রহণ করা দোষণীয় নয়। তবে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি তা পরিশোধ করে দায়িত্বমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা জরুরি। কেননা ঋণ বান্দার হক সংশ্লিষ্ট বিষয়। যার কারণে এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়ানক।
👉 তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঋণ থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাইতেন। যেমন হাদীসে এসেছে:
অর্থ: “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।” [বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩]
👉 এক সাহাবী মাত্র দু দিনার ঋণ রেখে মারা গেলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাযা পড়েন নি। পরে কাতাদা রা. তা পরিশোধ করা দায়িত্ব নিলে তিনি বললেন, الْآنَ بَرَدَتْ عَلَيْهِ جِلْدُهُ “এখন তার চামড়া ঠাণ্ডা হল।” (মুসনাদে আহমদ 3/629-ইমাম নওবী এ হাদীসের সনদটিকে হাসান বলেছেন)
👉 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:
“মুমিন ব্যক্তি আত্মা তার ঋণের সাথে আটকে থাকে যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়।” (তিরমিযী, হা/১০৭৪) অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ হওয়ার আগ পর্যন্ত তার বিষয়টি আল্লাহ নিকট আটকে থাকে। তার মুক্তি অথবা ধ্বংস কোন ফয়সালা হয় না।
👉 কেউ যদি ঋণ রেখে মারা যায় তাহলে কিয়ামতের দিন তার নেকি থেকে তা পরিশোধ করা হবে। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন,
“হে হুমরান, আল্লাহকে ভয় করো, আর তোমার উপর ঋণ রেখে মৃত্যু বরণ করো না। অন্যথায় তোমার নেকি থেকে তা নেয়া হবে। কেননা, সেখানে কোন দিনার বা দিরহাম থাকবে না।”
সুতরাং কেউ যদি আপনার নিকট ঋণ হিসেবে অর্থকড়ি পায় (বা আপনি কারো নিকট পান) তাহলে তা লিখে রাখা উচিৎ এবং পরিবারের লোকদের সেটা জানিয়ে রাখা কতর্ব্য যেন আপনি মৃত্যু বরণ করলে পরিবারের লোকরা তা পরিশোধ করতে পারে। অন্যথায় আখিরাতে আপনার নেকি থেকে ঋণ পরিশোধ করা হবে।
ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে তার পরিমাণ লিখে রাখার নির্দেশনা এসেছে কুরআনুল কারিমে। যাতে কোনোভাবেই ঋণ পরিশোধে ত্রুটি না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণের আদান-প্রদান করবে, তখন লিপিবদ্ধ করে রাখবে এবং তোমাদের মধ্যে কোনো লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে। লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে। সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশকম না করে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮২)
ঋণ পরিশোধ করার পর কল্যাণ ও বরকতের জন্য দোয়া করা। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঋণদাতার জন্য দোয়া করেছিলেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইসমাইল ইবনে ইবরাহিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু রাবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবার মাধ্যমে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছ থেকে চল্লিশ হাজার দিরহাম ঋণ বা করজ নিয়েছিলেন। এরপর তাঁর কাছে মাল (সম্পদ) আসলে তিনি তা আদায় করেন। আর এ বলে দোয়া করেন-
উচ্চারণ : ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ওয়া মালিকা'
অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা তোমার ঘরে এবং মালে (সম্পদে) বরকত দান করুন।’
ঋণ বা কর্জের বিনিময় তো এই যে, লোক কর্জদাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এবং তা আদায় করবে।’ (নাসাঈ)
0 Comments
Please don't enter any spam link in the comment box.